চকরিয়া নিউজ ডেস্ক :: দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে এক দিনেই ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা যাবৎকালের সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কেবল খুলনা বিভাগেই মারা গেছেন ৪৬ জন; ঢাকা বিভাগে ৩৫ জনের প্রাণ নিয়েছে এ ভাইরাস।
গত এপ্রিলের রেকর্ড ভেঙে ২৭ জুন এক দিনে ১১৯ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, তার চার দিনের মাথায় নতুন রেকর্ড দেখতে হল বাংলাদেশকে। গত একদিনে মারা যাওয়া ১৪৩ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৬৪ জনে দাঁড়াল।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮ হাজার ৩০১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এসেছে সরকারের খাতায়। আগের দিন দেশে রেকর্ড ৮ হাজার ৮২২ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সেই হিসাবে এক দিনে শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে শ পাঁচেক কমেছে। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা ১১৫ জন থেকে এক লাফে বেড়ে গেছে ২৮ জন। এ নিয়ে টানা পাঁচ দিন দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা একশর ওপরে থাকল। এর আগে এপ্রিলে টানা চার দিন একশর বেশি মৃত্যু দেখেছিল বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, কেবল ঢাকা বিভাগেই গত এক দিনে ৩৩৭৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের ৪০ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম, রাজশাহী আর খুলনা বিভাগেও শনাক্ত হয়েছে হাজারের বেশি রোগী। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার বেড়ে ২৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৪ হাজার ৬৬৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ২০ হাজার ৯১৩ জন।
করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় জুনের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে জারি হয়েছে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ। সাত দিনের এই লকডাউন বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে মাঠে। বিনা প্রয়োজনে বাইরে গেলে গ্রেপ্তার, জরিমানাও করা হচ্ছে। গত এক দিনে খুলনা বিভাগে যে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১১ জনই যশোরের, আর ১০ জন কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা। আর ঢাকা বিভাগে মারা যাওয়া ৩৫ জনের মধ্যে ১২ জন ঢাকা জেলার এবং ৮ জন টাঙ্গাইলের।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১৯ জন, চট্গ্রাম বিভাগে ১৫ জন, রংপুর বিভাগে ১০ জন, বরিশাল বিভাগে ৮ জন, সিলেট বিভাগে ৭ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এই ১৪৩ জনের মধ্যে ৭০ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৫১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৮ জনের বয়স ছিল ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল।
তাদের ৯০ জন ছিলেন পুরুষ, ৫৩ জন ছিলেন নারী। ১০৯ জন সরকারি হাসপাতালে, ২৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১১ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ৩৩৭৬ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া টাঙ্গাইল জেলায় ২৫৭ জন, ফরিদপুরে ১৬১ জন, নারায়ণগঞ্জে ১০০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে এ বিভাগে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম জেলাতেই ৫৫২ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে। এছাড়া নোয়াখালীতে ১২৭ জন এবং কুমিল্লায় ১২৫ জন শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৩৭৭ জন, নাটোরে ২২৫ জন, পাবনায় ১৯২ জন, বগুড়ায় ১৩৪ জন, নওগাঁয় ১১০ জন, সিরাজগঞ্জে ১১৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
খুলনা বিভাগের মধ্যে কুষ্টিয়ায় ৩২৪ জন, খুলনা জেলায় ২৪২ জন, যাশোরে ১৪২ জন এবং বাগেরহাটে ১২৩ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। রংপুর বিভাগের মধ্যে দিনাজপুরে ১৫১ জন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১০৮ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলায় ১২৯ জন ও সিলেট জেলায় ১৪৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
বিভাগওয়ারি হিসেবে ঢাকায় দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনের ৪৩৬২ জন থেকে কমে ৩৩৭৬ জন এবং খুলনা বিভাগে ১২৭৭ জন থেকে কমে ১২৪৫ জন হয়েছে। তবে রাজশাহী বিভাগে নতুন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ৯৩৩ জন থেকে বেড়ে ১২৭৯ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৫১ জন থেকে বেড়ে ১১৭১ জন হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৬৬টি ল্যাবে ৩২ হাজার ৫৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৮২টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ যা আগের দিন ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ ছিল।
দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ঢাকা জেলায় দৈনিক শনাক্তের হার আগের দিনের মতই ২০ শতাংশের উপরে রয়েছে, ঢাকা বিভাগে রয়েছে ২৩ শতাংশের কাছাকাছি।
চট্টগ্রাম বিভাগে ২৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে কমে ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ৩৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ হয়েছে। তবে রাজশাহী বিভাগে ২০ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৪ দশমিক ০৭ শতাংশ হয়েছে দৈনিক শনাক্তের হার। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা আট লাখ পেরিয়ে যায় গত ৩১ মে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের মধ্যে ৩০ জুন এক দিনে রেকর্ড ৮ হাজার ৮২২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ১১ জুন তা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। বৃহস্পতিবার দেশে রেকর্ড ১৪৩ জনের মৃত্যুর খবর এল। বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ কোটি ২২ লাখ ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৯ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
পাঠকের মতামত: